ঈশ্বর, ভগবান ও দেবতা মধ্যে কি পার্থক্য ?
এ তিনটি শব্দ এক নয় বরং সম্পূর্ণ আলাদা।
যদিও ইংরেজীতে ঈশ্বর, ভগবান ও দেবতাকে একত্রে GOD বলা হয়।
এবিষয়ে সংগৃহিত তথ্যালোকের ভিত্তিতে নিচের সংকলনটি লেখাঃ
#ঈশ্বর
ঈশ্বর এক, অব্যয় ও অদ্বিতীয়। তিনি অনাদির আদি। এক হয়েও তিনি বহুদা বিভুতিতে প্রকাশ। যেমন তিনি একদিকে সৃষ্টি কর্তা ও স্থিতির কর্তা, অন্যদিকে দিকে তিনি প্রলয়েরও কর্তা। ঈশ্বর হল সকল জাগতিক ক্ষমতার সর্বোচ্চ অবস্থানে অবস্থানকারী অস্তিত্ব। আর্যদের স্মৃতি শাস্ত্রে মূলতঃ ঈশ্বর বিষয়ে এভাবেই ধারণ দেয়া আছে। এই মহাবিশ্বের জীব ও জড় সমস্তকিছুর সৃষ্টিকর্তা ও নিয়ন্ত্রক আছে বলেই মনে করা হয়। ধ্বংসকর্তা, সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা আলাদা কেউ নন। প্রয়োজন অনুযায়ী ঈশ্বরের পূর্ণ রুপ মাত্র।
#ভগবান
“ভগ” ও “বান” – এদুটি শব্দের সন্ধির ফলে মূলতঃ ভগবান শব্দের উদ্ভব হয়েছে।
“ভগ” শব্দটি গুনবাচক উপসর্গ এবং “বান” শব্দের অর্থ হলো অধিকারী কিংবা যার আছে অর্থে বুঝায়।
“বান” শব্দের পূর্বে গুনবাচক উপসর্গ “ভগ” শব্দটি বসানোর পর একত্রে “ভগবান” শব্দটি এসেছে।‘ভগ’ অর্থ ঐশ্বর্য্য এবং ‘বান’ অর্থ অধিকারী, যার আছে। অথাৎ যিনি ঐশ্বর্যের অধিকারী তাকে বলা হবে ভগবান ।
পরাশর মুনি ভগবান শব্দের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন-
ঐশ্বর্য্যস্য সমগ্রস্য বীর্যস্য যশসঃ শ্রিয়ঃ ।
জ্ঞানবৈরাগ্যয়োশ্চৈব ষন্নত্ ভগ ইতিঙ্গনা ॥
#অনুবাদঃ যার মধ্যে সমস্ত ঐশ্বর্য্য, সমস্ত বীর্য্য, সমস্ত যশ, সমস্ত শ্রী, সমস্ত জ্ঞান এবং সমস্ত বৈরাগ্য এই ছয়টি গুন পূর্ণমাত্রায় বর্তমান, তিনি হচ্ছেন ভগবান।
এই জগতে কেউ বড় ধনী হতে পারে, কিন্তু কেউ দাবী করতে পারেনা আমি সমস্ত ধনের মালিক। এই জগতে কেউ জ্ঞানী হতে পারে ,কিন্তু তিনি দাবী করতে পারে না সমস্ত জ্ঞানের অধিকারী। কিন্তু ভগবান সমস্ত ধন ,সমস্ত জ্ঞান ,সমস্ত সৌন্দর্য্য, সমস্ত যশ ,সমস্ত শক্তির অধিকারী, তাই তাকে বলা হয় ভগবান । সুতরাং কোন ব্যক্তির মধ্যে এছ’টি গুনের পূর্ণ বিকাশ (আংশিক নয়) দেখা গেলে তাকে ভগবান সম্মোধন করতে বাঁধা নেই। মূলতঃ একারনে সনাতন ধর্মে বহু মুনি, মহামুনি, ঋষি, মহাঋষিদের নামের আগে ভগবান শব্দটির ব্যবহার হতে দেখা যায়। যেমনঃ ভগবান পরশুরাম।
#দেবতা
দেবতা শব্দের অর্থ হলো যাদের মানে ও দানে আমরা পুষ্ট।প্রকৃতির যে সকল উপাদান বা পরমেশ্বর সৃষ্ট বিভুতি জীবের জীবন ধারাকে সর্বদা মসৃন করে রাখে এবং তাদের দানে জীব তথা মানুষ পুষ্ট থাকে – এরাই মূলতঃ দেবতা। দেবতাদের মাতৃরুপ বা বিপরীত লিঙ্গের চিন্তনই হলো দেবী। এজন্য দেবতা কিংবা দেবীদের এক এক শক্তির উৎস এবং এক একটি শক্তির ধারণ রুপে পূজো করতে দেখা যায়।
কথায় কথায় হিন্দুদের সংখ্যায় ৩৩কোটি দেব ও দেবীর কথা বলা হয়। আসলে ব্যাপাটা ঠিক নয়।
বেদে বলা হয়েছে "ত্রয়স্তিমাশতি কোটি। "
এই ত্রয়স্তিমাশতি শব্দের অর্থ তেত্রিশ অনুবাদ করা হলেও কোটি শব্দের অর্থ আর অনুবাদ করা হয় নি। কোটি শব্দের অর্থ ২টি একটি হলো প্রকার ও অন্যটি সংখ্যাগত কোটি।
শতপথ ব্রাহ্মণ এবং অন্যান্য গ্রন্থে এটি পরিষ্কার ভাবে ব্যখ্যা করা হয়েছে।
অথর্ব বেদের দশম অধ্যায় সপ্তম সুক্তের ত্রয়োদশ শ্লোকে বলা হয়েছে-
যস্য ত্রয়স্ত্রিংশদ্ দেবা অঙ্গে সর্বে সমাহিতাঃ।
স্কম্মং তং ব্রুহি কতমঃ স্বিদেব সঃ।
অর্থাৎ, পরম ঈশ্বরের প্রভাবে এই তেত্রিশ জন দেবতা বিশ্বকে বজায় রেখেছে।
এই তেত্রিশ জন হলেন
#দ্বাদশ_আদিত্য:
ভাগবত পুরাণ অনুসারে এই দ্বাদশ আদিত্য হলেন:
বিবস্বান্
অর্যমা
পূষা
ত্বষ্টা
সবিতা
ভগ
ধাতা
বিষ্ণু (দ্বাদশ আদিত্যের অধিপতি)
বরুণ
মিত্র
ইন্দ্র
অংশুমান
#রুদ্র:
এই একাদশ রুদ্র হলেন মহাদেব শিবের বিভিন্ন রূপ
মন্যু
মনু
মহিনস
মহান
শিব
ঋতুধ্বজ
উগ্ররেতা
ভব
কাল
বামদেব
ধুতব্রত
অনেক গ্রন্থ অনুসারে একাদশ রুদ্র হলেন মানব শরীরের দশ চালিকা শক্তি এবং এক আত্মা।
বৃহদারন্যক উপনিষদে একাদশ রুদ্র হলেনঃ
প্রাণ(নিঃশ্বাস)
অপান(প্রশ্বাস)
ব্যন
সমান
উদাম
নাগ
কুর্ম্ম
কৃকল
দেবদত্ত
ধনঞ্জয়
আত্মা
#অষ্টবসু:
মহাভারত অনুসারে অষ্টবসু হলেন
ধরা (পৃথিবী)
অনল (অগ্নি)
অনিল (বায়ু)
অহ (ব্যপ্ত)
প্রত্যুষ
প্রভাষ
সোম
ধ্রুব
#দুই_অশ্বিন
নাসত্য এবং দস্র।
সুতরাং সর্বমোট (১২+০৮+১১+০২)= ৩৩ প্রকার বা শ্রেণীর দেবতা কিংবা দেবীর পুজো করা হয়, যারা প্রত্যেকেই কোন না কোন শক্তির স্বরুপ বা স্বরুপিনী এবং প্রকৃতিতে সেসব শক্তির কারণেই মানুষের জীবন মসৃন থাকে।
সুতরাং ঈশ্বর, ভগবান এবং দেবতা/দেবী–এক নয়।
তথ্যসুত্রঃ
১.বৃহদারন্যক উপনিষদ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন