সত্যনারায়নব্রতকথা-
নারায়ণং নমস্কৃত্যং নরচৈব্য নরোত্যমং
দেবী সরস্বতীং চৈব ততোজয় মুদিরয়েৎঃ।
কথা-
সত্যনারায়ণ পদ করিয়া বন্ধন,
ক্রমে ক্রমে বন্ধিলাম যত সুরগন ।।
কলিকালে নারায়ান পূজার কারণ
আবির্ভূত হইলেন মরতভুবন।।
দরিদ্র ব্রাহ্মণ এক ছিল মথুরায়
না দেখে সুখের মুখ দুঃখে কাল যায়।।
একদিন সেই ব্রাহ্মণ নগর ভ্রমিয়া
কিছু না পাইয়া ভিক্ষা কাতর হইয়া।।
বসিলেন তরুতলে বিষন্ন বদনে
রোদন করেন কত দুঃখ ভাবি মনে।।
দয়ালু হইয়া চিত্তে সত্যনারায়ন
ব্রাহ্মণের রূপধরী দিল দরশন ।।
ব্রাহ্মনে বলেন প্রভু সোন মহাশয়
কি হেতু রোদন করো বসিয়া ধরায়।।
ব্রাহ্মণ বলেন কি হবে বলিলে তোমায়
ফকির রুপেতে কহে ক্ষতি কিবা তাই।।
দ্বিজ কয় নিত্য নিত্য ভিক্ষা মেগে খায়
আজি নাই ভিক্ষামিলে দুঃখ চিন্তা তাই।
ফকির কহেন বিপ্র যাহ নিজপুর
আমারে পুজিলে হবে সব কষ্ট দূর ।।
বিপ্র কয় নিত্য পুঁজি শিলা নারায়ন
তাহা বিনা করিব কি ম্লেচ্ছ আচরণ।।
ফকির কহেন হাসি শোনো বিপ্রবর
বেদ বা কোরান কিছু নহে মতান্তর ।।
যেই রাম সেই রহিম নাম একি হয়
ত্রিলোকে নাহিকো দুই কোহিনু নিশ্চয়।
কহিতে কহিতে কথা অখিলের নাথ
শঙ্খ চক্র গদা পদ্মে সোভে চারি হাত।।
দেখিয়া ব্রাহ্মণ তবে পড়িলা ধরণী
কত মতে স্তুতিকরে গদো গদো বাণী।।
দেখিতে দেখিতে পুন হোয়েন ফকির
তাহা দেখি ব্রাহ্মণের চক্ষু হয় স্থির।।
ব্রাহ্মণ বলেন প্রভু অর্চিব তোমায়
পূজার প্রণালী কহ ধরি তব পায়।।
ফকির বলেন শুন শুন বিপ্রবর
যেমতে করিবে পুজা কহি অত্পর।।
গোধুম সওয়া সের করিবেক গুড়া
সুপারি সওয়া গণ্ডা পান রম্ভাছড়া।।
শর্করা সওয়া সের বা ইক্ষু গুড় দিবে
ক্ষীর কিম্বা দুধ সহ ভক্তিতে অর্চিবে।।
এইসব বস্তু বিপ্র করি আয়োজন
চারিদিকে বসিবেক যত ভক্তগণ।।
আমার গুনের কথা শুনিবে শ্রবনে
বিধানে পুজিবে বিপ্র পরম যতনে।।
সত্যপীর কহি সবে মাথে দিবে হাত
নারায়ন বলি করিবেক প্রণিপাত ।।🙏
{(হরিহরি বল বোল হরি)}🙏🙏🙏🐚।।
প্রসাদ লইবে যত্নে এইতো বিধান
এত কহি নারায়ন হন অন্তর্ধান ।।
শুনিভাবে গদগদ বিপ্র পুলকিত
ভ্রমিতে ভ্রমিতে গৃহে হন উপনীত ।।
ব্রাহ্মণী শুনিয়া হন হর্ষে নিমগন
সির্নি আদি করলেন যত আয়োজন।।
যথাবিধি অর্চিলেন নারায়ন পদ
রাতারাতি হয় গৃহে অতুল সম্পদ ।।
ইহা দেখি গ্রামবাসী কাঠুরিয়া গান
ভক্তি করি ভিজবরে জিজ্ঞাসা তখন।।
শুনি দ্বিজ বলিলেন বিধান সমস্ত
কাঠুরিয়া গান শুনি হয় বড় ব্যস্ত ।।
সির্নি আদি কৈল তারা বিহীত প্রকারে
সর্ব কষ্ট দূর হইল হর্স ঘরে ঘরে ।।
সদানন্দ নামে সাধু ছিল একজন
কাঠুরের সুখ দেখি হয়ে হৃষ্টমন ।।
জিঞ্জাসিয়া আদি অন্ত সকলি জানিল
জানিয়া সাধুর হৃদেভক্তি জনমিল ।।
সাধু কহে অপ্রতুল নাহি অন্য ধনে
কন্যা নাই কষ্ট তাই চিনতি মনেমনে।।
যদি মোর গৃহে এক জনমে তনয়া
পুজিব শ্রীসত্যপীরে সির্নি অগ্রে দিয়া।।
এত কহি গেল চলি সাধু অঙ্গী করি
কালেতে জনমে কন্যা পরমা সুন্দরী।।
সির্নি দেওয়ার কথা সাধু যে ভুলিল
সুপাত্র দেখিয়া সাধু কন্যা বিবাহ দিল।।
কতকালে সাজাইয়া সাতখানি তরী
জামাতা লইয়া সাধু যায় তাড়াতাড়ি।।
দক্ষিন পাটনে ছিল রাজা কলানিধি
সেই দেশে সদাগরে নামাইল বিধি।।
নৃপে সম্ভাসিয়া থাকে তরনী চাপিয়া
বিপত্তি ঘটিল দেখ সিরনি না দিয়া।।
রাজার ভান্ডারে যত ধনাদি আছিল
নিশিমধ্যে সাধুর নৌকায় পুর্ন হৈল ।।
চর মুখে শুনি রাজা ধরিয়া লইল
জামাতা শ্বশুরে লয়ে কারায় পুরিল।।
রাজাদেশে কোটাল মশানে লয়ে যাই
পাত্র অনুরোধে তারা দোঁহে প্রান পায় ।।
কারাগারে বন্দি তারা থাকে দুইজন
কি কহি দুঃখের কথা না হয় বর্ণন ।।
এখানে সাধুর ভার্জিা আর তার সুতা
পতির বিলম্ব দেখি চিত্তে দুঃখ যুতা ।।
সর্বস্ব হইল নষ্ট পড়িল দুঃখতে
দাসিত্ব করিয়া রহে পরের গৃহেতে।।
একদিন সাধুসুতা বেড়াইতে গিয়া
আনন্দিতা বিপ্রঘরে সিরনী দেখিয়া।।
বিশেষ জানিয়া তথ্য করিল মাননা
পিতা পতি উভে গৃহে আসে এ কামনা।।
তারপর গেল ঘরে সাধুর তনয়া
সত্যনারায়নের তাহে জনমিল দয়া।।
শ্বশুর জামাতা যথা বন্দি কারাগারে
স্বপ্নে কন নারায়ন সেই নরবরে ।।
শুন শুন ওহে রাজা আমার বচন
কলিকালে পুজ্য আমি সত্যনারায়ন।।
সদাগর আর তার স্নেহের জামাই
বিনাদোষে বন্দি আছে দোষ কিছু নাই।
রজনী প্রভাত হৈলে দুই সদাগরে
দশগুন ধন দিয়া তুসিবে সাদরে ।।
বলিতে বলিতে হইল মোহন মুরতি
স্বপ্ন হেরি চমকিয়া উঠে নরপতি ।।
প্রাতকালে উঠি রাজা সবার গোচর
আনাইল কারা হইতে দুই সদাগর।।
বসন ভুসন আর বহু ধন দিল
সাধুরে সন্তুষ্ট করি বিদায় করিল ।।
দশগুন ধন লভি নায়ে দিল ভরা
দেশেতে যাইতে সাধু করিলেন ত্বরা।।
পুলকিত সর্বজন হর্ষ কোলাহল
নাহিজানে সত্যদেব করিলা মঙ্গল।।
তবে সত্যদেব মন বুঝিতে সাধুর।
ফকির রুপেতে কন বচন মধুর।।
ঘাটে বসি ভিক্ষা হেতু শুন সদাগর।
কিছু ভিক্ষা দিয়া তুমি যাও নিজঘর।।
হইবে মঙ্গল তব আমি ঘরে যাই
কুশলে থাকহ তুমি শুন সাধু ভাই ।।
সাধু কহে তোমা দিলে কিবা ফল হবে
ক্ষমতা থাকিলে কেন কানি পরে রবে ।।
তুষ ও অঙ্গার মাত্র আছে মোর নায়
চাহ যদি দিতে পারি জানাই তোমায় ।।
শুনি কিছু না বলিল সত্যনারায়ন
বসিয়া রহিলা ঘাটে মুদিয়া নয়ন ।।
কিছুদুর গিয়া হেরে শশুর জামাই
তুষ ও অঙ্গার বিনা নায়ে কিছু নাই ।।
সাত নায়ে যত বস্তু সকলি অমনি
শশুর জামাই কান্দে শিরে কর হানি ।।
জামাতা কহিল চিন্তে তাবে সাদাগরে
এ ঘটনা ঘটে ভিক্ষা না দিয়া ফকিরে।।
সে জন সামান্য নহে বুঝি অনুমানে
চল চল ধরি গিয়া তাহার চরনে ।।
এত শুনি সদাগর ফিরাইল তরী
পুনঃ সেই ঘাটে যায় অতি ত্বরা করি ।।
হেরিল ফকির তথা আছেন বসিয়া
দুজনে পড়িল গিয়া পদেতে ধরিয়া ।।
অপরাধ ক্ষম প্রভু কর এবে দয়া
নরাধম হেরি দেহ চরনের ছায়া ।।
হাসিয়া ফকির বলে নায়ে গিয়া চড়
কড়ার ভিক্ষারী আমি পদে কেন ধর ।।
কান্দিতে কান্দিতে তবে বলে দুইজন
কুকর্ম করেছি ক্ষমা কর নারায়ন ।।
মানিয়া সিরনী ভুল হয়েছে আমার
অপরাধ হইয়াছে পদেতে তোমার ।।
কহিলাম সত্য এই বলি দাড়াইয়ে
সওয়া সের স্বর্নের সির্নি দিব গিয়ে।।
সত্যনারায়ন তবে সদয় হইল
প্রনতি করিয়া সাধু তরিতে চড়িল ।।
উত্তরিল ঘাটে সাধু হইল কোলাহল
সাধুর গৃহিনী সুতা শুনি কৌতুহল ।।
নৌকার দ্রব্যাদি যত ঘরেতে লইয়া
সিরনি করিল সাধু পুলকে মজিয়া।।
প্রসাদ লইল সবে যুড়ি দুই পাণি
লইতে মাটিতে ফেলে সাধর নন্দিনী ।।
দেখি সত্যদেব তবে ক্রৌধিত হইল
জামাতা সহিত নৌকা সলিলে ডুবাল।।
তাহা দেখে সাধু করে ঘোর উচ্চনাদ
হায় হায় আকস্মাৎ হলো কিপ্রমাদ ।।
শুনি সাধু কন্যা যায় ডুবিয়া মরিতে
জননী না পারে তারে ধরিয়া রাখিতে ।।
হেনকালে দৈববানী হৈল আচম্বিত
সিরনী ফেলিয়া সুতা কৈল বিপরীত ।।
ইহা শুনি সাধুসুতা তখনি উঠিয়া
মাটি হৈতে সির্নি তবে খাইল চাটিয়া।।
ভাসিল নৌকার সহ সাধুর জামাই
যত দ্রব্য আছে সব কিছু নড়ে নাই ।।
তরির যতেক বস্তু ভান্ডারেতে আনি
করিলেক সওয়া সের সোনার সির্নি ।।
স্বপ্নে বলিলেন প্রভু শুন সাধু কই
আটায় সন্তুষ্ট আমি সর্বক্ষন হই ।।
স্বপ্নে শুনি সদাগর পরম আনন্দ
আটার সিরনী কৈল সাধু সদানন্দ ।।
এ কথা রটিল ক্রমে সবার আলয়
ভক্তিতে পুজিলে বাঞ্ছা আশু সিদ্ধ হয়।।
গুনকথা শুনিবেক হয়ে এক মন
বিমনা হইলে রুষ্ট সত্যনারায়ন।।
এক চিত্তেশুনে কিম্বা পুজে নারায়ন
ছুইতে না পারে তারে কদাচ শমন ।।
শঙ্করাচার্য্যের মত প্রবন্ধ প্রাচীন 👃
অতঃপর বল সবে সত্যনারায়ন🙏🙏🙏।
{(হরিহরি বল বোল হরি)}।
👃M🥕♟
প্রনাম-
নমঃ ব্রহ্মন্যদেবায়ঃগোব্রাহ্মনহিতায়চ্
জগৎধিতায় শ্রী কৃষ্ণায় গোবিন্দায় নমো নমঃ।।🙏
ধ্যান মন্ত্র-
ধ্যায়েসত্যং গুনাতিতং গুনত্রয় সমম্বিতং
লোকনাথং ত্রিলোকেশং পীতাম্বরং ধরংবীভূমং ইন্দিবর দলসামাং শঙ্খ চক্র গদা ভৃতাম
নারায়ণন চতুর্বাহু শ্রীবৎস পরিপুজিতং
গোবিন্দং গোকুলানন্দং জগতং পিতরং গুরুং
ভক্তবাঞ্ছাকল্পতরু ব্রহ্মদৈ পরিপুজিতং।। নমঃসত্যনারায়নায়নমঃ🙏🙏🙏🙏🙏
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন